নোয়াখালীতে হেযবুত তওহীদের উপর হামলার হুমকি, উচ্ছেদে আল্টিমেটাম উগ্রবাদীদের

নোয়াখালীতে হেযবুত তওহীদের ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের বাড়িতে হামলার ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠী। তওহীদি জনতার নাম করে পোস্টারিং করে, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে হামলার জন্য সাধারণ মানুষকে উস্কানি দেয় তারা।
শনিবার বাদ জোহর নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার চাষীরহাট ইউনিয়নের পোরকরা গ্রামের নতুন বাজার এলাকায় বসবাসরত হেযবুত তওহীদের চার শতাধিক পরিবারের উপর নৃশংস আক্রমণের ঘোষণা দেওয়া হয়। ত্রাণ বিতরণের নাম করে তারা চাষীরহাট নতুন বাজারে সমাবেশ ডাকে। প্রশাসন তাদের মতলব বুঝতে পেরে সেখানে সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। স্থানীয় লোকজনও তাদেরকে চাষীরহাটে সমাবেশ করতে নিষেধ করলে তারা সোনাইমুড়ী গিয়ে সমাবেশ করে। সেখানে গিয়ে তারা হেযবুত তওহীদকে নোয়াখালী থেকে উচ্ছেদের ঘোষণা দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিকালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি চৌরাস্তায় একটি সমাবেশ করে দুই ঘণ্টা ধরে উগ্রবাদী ও আক্রমনাত্মক বক্তব্য প্রদান করে এবং হেযবুত তওহীদকে নোয়াখালী থেকে চলে যেতে বলে। তা না হলে তাদের উপর হামলা করে তাদের এলাকাছাড়া করা হবে বলে হুমকি প্রদান করা হয়। সমাবেশে তারা বলে, আমাদের কাছে এমন অস্ত্র আছে যা দ্বারা একজন লোক এক হাজার লোকের মোকাবিলা করতে পারবে। পুলিশ যদি হেযবুত তওহীদের অভিযোগ আমলে নেয় তাহলে সোনাইমুড়ি থানায় হামলা করা হবে বলেও হুমকি প্রদান করা হয় সমাবেশ থেকে।
জানা যায়, উক্ত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুরের জনৈক খতিব মুফতি রিজওয়ান রফিকি, আল্লামা আব্দুল বাসেত খান সিরাজী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবীসহ আরও অনেকে।
এর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় সারাদিনব্যাপী হামলা, হত্যা, সমাবেশ করার আহ্বান জানানো হয়। হামলার আশঙ্কার কথা হেযবুত তওহীদের নেতৃবৃন্দ প্রশাসনকে জানালে গতকাল বিকালে সেনাবাহিনীকে চাষীরহাটে হেযবুত তওহীদের ইমামের বাড়ির সন্নিহিত এলাকায় টহল দিতে দেখা যায়।
এদিকে হেযবুত তওহীদের ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম রবিবার এক ভিডিও বার্তায় সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘হাসিনা সরকার পদত্যাগ করার দিন আপনি বলেছিলেন, আপনার উপর ভরসা রাখতে। আপনি সকলের জানমালের নিরাপত্তা দিবেন। আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম। আজ আমার বাড়ির সামনে এসে আমাকে উচ্ছেদ করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’
‘জনাব ওয়াকার উজ জামান সাহেব, আপনি এদেশের নাগরিক, আমিও এদেশের নাগরিক। আমাকে হুমকি দিতে পারে না। আমি কোনো অন্যায় করিনি। আজকে আমার উপর হামলা হলে আন্তর্জাতিক মহলে অত্যন্ত খারাপ বার্তা যাবে।’
তিনি সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, ‘উগ্রবাদীদের হাতে দেশকে তুলে দিবেন না। আমি আছি আপনাদের সাথে। আমরা বাংলাদেশকে রক্ষা করব ইনশাল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘এই উগ্রবাদী গোষ্ঠীটি হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বিরোধিতা করে আসছে। বৈষম্যহীন দুর্নীতিমুক্ত একটি দেশ গড়তে ছাত্রজনতা রক্ত দিয়েছে আর এই উগ্রবাদী গোষ্ঠীটি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে।’
‘আমরা রাজনীতি করি না, আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমরা কালেমার ভিত্তিতে মানুষকে তওহীদের উপরে ঐক্যবদ্ধ হবার দাওয়াত দিয়ে আসছি। হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে একটা অন্যায় করার রেকর্ড নেই। আদর্শগত কিছু মতপার্থক্যের জন্য তারা আমাদের হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। তারা এখানে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানোর পাঁয়তারা করছে,’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।
হামলার ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আফগানিস্তানের তোরা বোরা পাহাড় নয়। আমরা হেযবুত তওহীদ। পালানোর অভ্যাস আমাদের নেই। আমরা জীবন দেব, কিন্তু আমাদের মাটি আমরা ছাড়ব না।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘আপনি বলেছিলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে, সবাই ইনজয় করো। সবাই স্বাধীনতা ফিরে পাবে। কোথায় স্বাধীনতা? আমাকে উচ্ছেদ করার হুমকি দিচ্ছে, আল্টিমেটাম দিচ্ছে। আমি কোথায় যাবো?’ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘হস্তক্ষেপ করুন। তাদেরকে নিবৃত করুন। ঘটনা হালকাভাবে নিবেন না। আমাকে সবাই চেনে, আমি কী করি, কী বলি সবাই জানে। হাজার হাজার কর্মী আছে আমার। পরিস্থিতি বহুদূর পর্যন্ত যেতে পারে। মনযোগ দিয়ে বিষয়টি দেখবেন বলে আমি আশা করছি।’
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে শেরপুর, সুনামগঞ্জ, কুষ্টিয়া, পাবনা, লক্ষ্মীপুরসহ হেযবুত তওহীদের আরো বেশ কয়েকটি কার্যালয়ে হামলা করা হয়। নোয়াখালীতে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিক ও কৃষকদের প্রায় ২০০ পরিবারের ঘরবাড়িতে ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে অন্তত ২ কোটি টাকার সম্পত্তি লুট করে এবং অগ্নিসংযোগ করেছে। পরবর্তীতে গরুর খামার লুট করার চেষ্টা করা হয়, গরুর খামারের জন্য তৈরি খড়ের গাদা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
হেযবুত তওহীদের সহস্রাধিক সদস্য, শিশু, নারী, বৃদ্ধ বসবাস করে চাষীরহাটে। সেখানেই হেযবুত তওহীদের মাননীয় ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের বাড়ি, মসজিদ, স্কুল, গরু ও মৎস্য খামারসহ অর্ধ শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প। এসবের উপর হামলা করাও তাদের অন্যতম লক্ষ্য, এমন দাবি হেযবুত তওহীদের।
হেযবুত তওহীদের চট্টগ্রাম বিভাগীয় আমির নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আনরেস্ট পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে একটি সন্ত্রাসী উগ্রবাদী গোষ্ঠী। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা লোকজনকে ব্যাপকভাবে ডাকাডাকি করে। গতকাল তারা সোনাইমুড়ীতে সমাবেশ ডেকে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে মানুষকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে। যদিও সাধারণ মানুষ তাদের মিথ্যাচারে কান দিচ্ছে না, সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে তারা তেমন সাড়া পাচ্ছে না। তথাপি তাদের উদ্দেশ্য যেভাবেই হোক এখানে হামলা করবে, লুটপাট করবে। যেমনটি করেছিল ২০১৬, ২০০৯, ২০০৩ ও ২০০০ সালে।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালেও হামলা করে ১১৪ জন নারী, শিশু, বৃদ্ধকে মারাত্মকভাবে জখম করা হয়েছিল। দুইজনকে জবাই করে হত্যার পর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১৪টি বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও ২০০০, ২০০৩ ও ২০০৯ সালেও হেযবুত তওহীদের ইমামের বাড়িতে হামলা করে লুটপাট করা হয়, অগ্নিসংযোগ করে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।