অপরাধরাজনীতিসর্বশেষ

আ’লীগের প্রভাবে কোটিপতি ‘কসাই শাকিল’

‘নোবিপ্রবিতে ডিউটি না করেই তুলতেন বেতন’ ‘কসাই শাকিল’

‘নোবিপ্রবিতে ডিউটি না করেই তুলতেন বেতন’
আ’লীগের প্রভাবে কোটিপতি ‘কসাই শাকিল’।

নিজস্ব প্রতিনিধি : 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নোয়াখালী জেলা কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম সামছুদ্দিন জেহানের হাত ধরে ছাত্রলীগে প্রবেশ। পরে বাসার টুকটাক কাজ করে জয় করে নেন জেহান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মন। মাঠে শ্রম না দিয়েই পরবর্তীতে জেহানের প্রভাবে ভাগিয়ে নেন জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ। সেই থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। পেয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে চুক্তিভিত্তিক চাকুরি। কিন্তু চাকুরিতে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো তাকে ডিউটি করতে হয়নি, কাজ না করেই মাস শেষে তুলতেন বেতন। কারণ তিনি ছাত্রলীগ নেতা!

আওয়ামী লীগের প্রভাবে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া ব্যক্তির নাম নুর আলম শাকিল। তিনি নোয়াখালী সদর উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মাহে আলমের ছেলে। পিতা মাহে আলম পেশায় একজন কসাই। ছোট বেলায় পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে বাবার সঙ্গে শাকিলও করতেন কসাইয়ের কাজ। কিন্ত ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম সামছুদ্দিন জেহান সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর বদলে যায় ছাত্রলীগ নেতা কসাই শাকিলের বাগ্যের চাকা। ওই সময় থেকে শাকিল উপজেলা পরিষদে একটি সেন্ডিকেট তৈরী করে নোবিপ্রবিতে চাকুরির সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা পরিষদের পিআইও সেকশন, ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন, হাট-বাজার ও জলমহাল ইজারা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। এরপর থেকে শুরু হয় তার লুটপাট।

সদর উপজেলা পরিষদের একাধিক কর্মকর্তা নামপ্রকাশে অনইচ্ছুক জানান, একেএম সামছুদ্দিন জেহান সাহেব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন পিআইও সেকশন, ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন, হাট-বাজার ও জলমহাল ইজারসহ বেশিরভাগ উন্নয়ন কাজের টেন্ডার ও বন্ঠন ছিল কসাই শাকিলের নিয়ন্ত্রণে। সে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে চাকুরি করলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সময় দিতেন উপজেলা পরিষদে।

স্থানীয় একাধিক সুত্র জানিয়েছে, পিআইও অফিসের টিআর, কাবিখা, কাবিটা প্রকল্প তৈরী করে প্রকল্পের চেয়ারম্যানদের নামে মাত্র কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে কাজ না করিয়েই বেশিরভাগ প্রকল্পের টাকা লুট করে নিতেন শাকিল সেন্ডিকেট। ওই দপ্তরের অর্থায়নে নির্মিত প্রতিটি ব্রিজের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার সিংহভা যেত সিন্ডেকেটের সদস্যদের পকেটে। যার কারণে ব্রিজগুলোর কাজ হয়েছে অত্যন্ত নিন্মমানের। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনের এডিপির সকল কাজ ১০ থেকে ১৫% পিসি নিয়ে বন্ঠন করতে শাকিল। যার কারণে মাঠে টেকসই কাজ করতে পারেননি ঠিকাদারগন।

অন্যদিকে উপজেলা পরিষদের আওতাধীন হাট-বাজার ও জলমহাল ইজারায়ও একক আধিপথ্য বিস্তার করতে কসাই শাকিল। তার নিয়ন্ত্রণে ছিল দরপত্র বিক্রি থেকে শুরু করে জমা দেয়া। এক সঙ্গে নিজ অথবা নিজের পচন্দের ব্যক্তির নামে সব বাজার ও জলমহালের নামে ফরম ক্রয় করে সরকারি কমমূল্যে তা ইজারা গ্রহণ করে বিক্রি করতেন সরকারি মূল্যের ১০ থেকে ১৫গুন বেশি মূল্যে। ২০২৩ সালে হাটবাজার ইজারার সরকারি ৯ লক্ষাধিক টাকা অগ্রণী ব্যাংক দত্তেরহাট শাখায় জমা না দিয়ে উপজেলা প্রশাসনে ভুয়া জমা রশিদ দিয়ে পুরো টাকা লোপাট করে নেয় শাকিল। পরবর্তীতে তা জানাজানি হলে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওই টাকা আদায় করে ব্যাংকে জমা করেন। তখন সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে আইনি ব্যবস্থা থেকে রেহায় পেয়ে যান শাকিল।

স্থানীয়দের অভিযোগ শাকিল শুধু উপজেলা পরিষদই নয়, একেএম সামছুদ্দিন জেহানের হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোটি কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতো সে। এইজন্য স্থানীয় যুবকদের নিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে তাদের হাতে বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দেয়া হয়। গত ০৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর গা ডাকা দেয় শাকিলসহ তার সেন্ডিকেটের সদস্যরা। কিন্তু তাদের হাতে রয়ে গেছে অবৈধ অস্ত্রগুলো।

এসব অভিযোগের বিষয়ে একাধিক বার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুর আলম শাকিলের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্টার (চলতি দায়িত্ব) তানজিদ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমি গত মাসের ১০ তারিখে যোগদান করেছি। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়। তবে তিনি যদি কাজ না করেই বেতন উত্তোলন করে থাকেন, তাহলে খোঁজখবর নিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button