জাতীয়সারাদেশ

তিন এসিল্যান্ডের নির্দেশনা অগ্রাহ্য: সরকারি ভূমি অবৈধ দখল বহাল

মুক্তাগাছায় টানা তিন এসিল্যান্ডের নির্দেশনা অগ্রাহ্য: সরকারি ভূমি অবৈধ দখল বহাল

ময়মনসিং প্রতিনিধি :

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় ঢলুয়াবিল এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব ও অপশক্তির জোরে সরকারি রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দখল করে রাখা হয়েছে। তিনজন এসিল্যান্ডের বিভিন্ন সময়ে নেওয়া আইনি পদক্ষেপ ও নির্দেশনার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দীপক কুমার ও তার সহযোগীরা সরকারি জায়গায় মুক্তাগাছা ফিলিং স্টেশনের নামে একটি পেট্রোল পাম্প স্থাপনসহ অবৈধভাবে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দীপক কুমার ও পাম্প মালিকরা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সহায়তায় এই অবৈধ নির্মাণ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদ রানা একটি নোটিশের মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনা সরানোর নির্দেশ দেন। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ সীমানা প্রাচীর ভেঙে দেওয়া হলেও তাঁর বদলির পর দীপক কুমার পুনরায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন।

পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর এবং ১২ ডিসেম্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোমানা রিয়াজ পূর্বের আদেশ পুনর্ব্যক্ত করে সীমানা প্রাচীর সরানোর চূড়ান্ত নির্দেশ দেন, যা পরে অজানা কারণে বাস্তবায়িত হয়নি। প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে দীপক কুমার রাজনৈতিক প্রভাবের জোরে পুনরায় অবৈধ দখল বহাল রেখেছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হায়দার পুনরায় দীপক কুমারকে ৩ অক্টোবরের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা সরানোর জন্য চূড়ান্ত নোটিশ দেন। এবং নির্দেশনা অমান্য করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে এখনো অবৈধ স্থাপনা সরানো হয়নি পরিপূর্ণভাবে।
এবিষয়ে কথা হয় মুক্তাগাছা ফিলিং স্টেশনের স্বত্বাধিকারী দিপক কুমারের সাথে তিনি জানান ভাঙ্গনের কাজ চলমান রয়েছে, বৃষ্টির কারণে কাজ শেষ করতে পারছেন না তবে নির্বাহী ম্যাজিস্টেট তানভীর হায়দার এর থেকে মৌখিক ভাবে সময় নিয়েছেন তিনি।
মুক্তাগাছার সচেতন নাগরিক মোঃ সাজাদুল করিম জানান, “এটি অত্যন্ত উদ্বেগের ও হতাশার। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভূমি দখল মুক্তাগাছায় নতুন নয়। তবে ভূমি দখলের বিরুদ্ধেও ভূমি প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নিয়ে অবৈধ দখল মুক্ত করার নজির রয়েছে। ২০২১ সালে এসিল্যান্ড মাসুদ রানা পরিচালিত কার্যক্রমে পৌর এলাকাতেই প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি ভূমি অবৈধ দখল মুক্ত করা হয়েছিল। প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে আইনি শক্তির কাছে অপশক্তিও পরাজিত হতে বাধ্য। এই পরিস্থিতিতে উপজেলা ভূমি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্থানীয় ভূমি প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় একটি শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করবে। ”
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের মনে প্রশ্ন, কেন আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? আইনের প্রতি এমন অশ্রদ্ধা কি আইনের শাসনের মূলনীতি লঙ্ঘন নয়? এখন সময় এসেছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার এবং জনস্বার্থে এই ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড রোধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button